Friday, August 22, 2008

সিনোরিনা...

প্রিয় সিনোরিনা, চোখ মুছে নাও শতাব্দির হলুদ খামে,

আদিম অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষাগুলোকে তুমি এবার মুক্তি দাও,

তুমি জানতে চেয়েছিলে পাখি হয়ে ওড়ার অনুভূতি কেমন,তবে হয়ে যাও ব্যালোরিনা,

ছন্দ তোমাকে মুক্তি দেবে, দেবে প্রসারিত বাহুতে ডানার অনুভূতি,

তুমি মুক্তি চেয়েছ, চেয়েছিলে সব সম্পর্ক থেকে মুক্তি,

মুক্তি কি জানতে চাইলে প্যালেস্টাইনের বাতাসে জন্ম নাও,

চে গুয়েভারার ডাইরির গন্ধ শুকে নিও, ওখানেই মুক্তি আছে,

সিনোরিনা,তোমার স্বপ্নগুলো ছিল আকাশ ছোয়া,

তুমি স্বপ্নকে বলতে বাড়ন্ত চারা গাছ,সময়ের ভাজে তারা হারিয়ে গেছে নিয়মিতভাবে,

তুমি অভিযোগ করোনি,

সিনোরিনা জানো…আমারও এমন কিছু স্বপ্ন ছিল,

শর্ষে খেতের মত একটানা রঙ্গিন… বাতাসে বাতাসে ফসলের ঢেউ,

আমার স্বপ্নগুলোও………

তুমি চিঠি লিখতে তোমার মৃত মায়ের এপিটাফের ঠিকানায়,

সেসব চিঠির উত্তর পেতে না বলে তোমার মন ভীষন খারাপ হত,

তুমি জানতে চেয়েছিলে কেন এমন হয়,

এমন না হলেও তো পারত,

সিনোরিনা…

প্রিয় সিনোরিনা,

চোখ মুছে নাও শতাব্দির হলুদ খামে,

তুমি অর্কিডের রঙ দেখে অবাক হতে,

অবাক হতে ম্যাক্সিকান মিউজিকের মন ভালো করার অদ্ভূত ক্ষমতা দেখে,

জানো, আমি এখনো অবাক হই দু একটা কবিতা পড়ে,

ধন্যবাদ মাইকেল আ্যনজেলোকে যার ছবি দেখে এখনো অবাক হতে পারি,

ধন্যবাদ ম্যারি ক্যাসেটকেও,

যার ছবি দেখে অবাক না হওয়াটাই অসম্ভব,

সিনোরিনা, তুমি ভালোবেসেছিলে তোমার প্রতিবেশী জনাথনকে,

সে এক সাধারন কুমারের ছেলে দেখে তোমার বাবা মা তা মেনে নেয়নি,

প্রতি রোববার তাকে তুমি চিঠি লিখতে,

ভীষন কষ্ট ভালোবাসায়, তাই না সিনোরিতা!

আমার ভালোবাসার গল্প তোমাকে পরে আরেকদিন বলব,

রাত বাড়লে জানো…

ভীষন মন খারাপ হয়,

আকাশ দিয়ে এক ঝাক পাখির মত কি যেন উড়ে যায়,

কাক না ফিনিক্স জানি না, তারাও হতে পারে,

চোখ মুছে নেই শতাব্দির হলুদ খামে,

অনুভূতিশুন্য সময়ের বারান্দায় আমিও দাঁড়িয়ে থাকি তোমার সাথে,

হারানো স্বপ্নগুলোকে ভীষন ভালোবাসা দিয়ে আদর করি,

আর ক্ষমা করি ঈশ্বরের স্বার্থপর ক্ষমতাকে,

যা কেড়ে নেয় সব,

সিনোরিনা মানুষ মরে যায়, স্বপ্ন মরে না,

শতাব্দির হলুদ খামে ভেসে বেড়ায় বাতাসে,

আর নক্ষত্রের রাতে সে চিঠি পড়ে শোনায় এক গৃহত্যাগী জোছনা……।।

(বাসে বসে লিখা)

Sunday, July 13, 2008

যারা ছায়ায় থাকে আর যারা অন্ধকারে...৪


- রোদের আলোটাও আজ বেশ চোখে লাগছে। এই শহরটা কেমন গদবাধা নিয়মে আজকেও খামখাই ব্যস্ত, মানুষের কি ক্লান্তি আশে না? নাকি আমারি কেবল ক্লান্ত লাগে...নন্দিতা বলো কেমন আছো? 

-আমি দিব্বি ভালো আছি, তোমার কি মন খারাপ? 

-আমি ভীষন কষ্টে আছি, বুঝলে।  আজ সারাদিন ভীষন কষ্টে আছি। হাটতে কষ্ট, হাসতে কষ্ট, আম গাছের পাতায় আলতো রোদে কষ্ট, আমার ঘর-বাহির-জানালায় কষ্ট। কেমন যেন বৃষ্টির শব্দের মত একটানা অনেকখন কষ্ট।

- অপু তোমার কষ্টটা কি আমাকে বলা যায়?

- কষ্ট কি বলা যায়, বলো নন্দিতা? আসলেই কি বলা যায়! বলে ফেললেই কি সব কষ্ট চলে যায়? কষ্ট কি কাউকে দিয়ে দেয়া যায়? সবার জীবনেইতো কত আনন্দ-কষ্ট আসে যায়। তবে আমার কষ্টগুলোই কেবল যাচ্ছে না কেন? সবই তো ফুরায়, আমার কষ্টগুলো ফুরায় না কেন! 

- আমাকেতো বলতে পারো। দেখবে ভালো লাগবে।

- আমার খুব গভীর একটা কষ্ট আছে। জানো নন্দিতা, একটা কষ্ট মনের ভেতর অনেকদিন থাকলে তার জন্য মায়া জমে যায়। কষ্টটা আমার মনের ভেতর কোথাও দোলনায় বসে দোল খায়...তখন মানুষগুলোকে একেকটা নদী মনে হয়।

- আমি ছাড়া তোমার আর কে আছে বলো? তোমার কষ্টটা কী অপু?

- আজ না আরেকদিন বলব। আমি ভালো নেই, একটুও ভালো নেই।

- আজ না কেন? আজ বললে কী হয়? তুমি কথা এড়িয়ে যাও কেন?

- সব কেনো-র কারন থাকে না, মানুষের সব কাজেরও কারন থাকে না, অথবা মানুষ তা জানে না। যারা সব কিছুর কারন খুজে তাদের সুখ মরে যায়... বুঝলে নন্দিতা, মানুষের মন বড় বিচিত্র।

- সবার না তুমি আর তোমার মন বেশি বিচিত্র।

-হা হা হা কী তবে বিচিত্র না?

- তা তো জানি না।

- একটা লোমশ বিড়ালের গায়ে হাত দিয়ে দেখো, ঐ স্পর্শটা বিচিত্র, জলে হাটু পর্যন্ত পা দুবিয়ে দেখো, ঐ অনুভূতিটা বিচিত, ভালোবাসা সবচেয়ে বিচিত আর মানুষের জীবন তার চেয়েও......

- তুমি সব কিছু এত অদ্ভুত করে ভাবো কেন?

- কী তবে অদ্ভুত না?

- আবারো!

- আজ সারাদিন ভীষন কষ্টে আছি...

- কি এমন কষ্ট?

- থাক, আজ না, পরে আরেকদিন বলব।।

Tuesday, July 8, 2008

কোথাও কেউ নেই ৩...

অপেক্ষায় আছি, না কোন চিঠি আসেনি, তোমার চিঠি আসেনি। আসেনি অনেকদিন তাও কেন অপেক্ষায় থাকি তুমি কি জানো? আমি না কোন কারন খুজে পাই না।আমি জানি আসবে না, আর কোনদিন তোমার চিঠি আসবে না।তাহলে কেন অপেক্ষা করি? অপেক্ষায় কি সুখ? নাকি সান্তোনা? আচ্ছা সুতপা, অপেক্ষায় এত কষ্ট কেন বলতে পারো? অপেক্ষা ঘড়ীর কাটা দিয়ে মাপা যায় না, সমুদ্রের গভীরতা দিয়ে তা মাপলেও ভুল হয়ে যায় বারবার। বিজ্ঞান বলে দুইটা ঘটনার মধ্যবর্তী দূরত্বই হল সময়, তবে প্রতিটা সেকেন্ডের দুরত্ব সমান নয়, অপেক্ষা একটি গভীর সময়ের লুপ। অপেক্ষার প্রতিটি সেকেন্ডে লুকিয়ে থাকে এত এত সময়, বল আমি পালাই কোথায়?? তুমি অপেক্ষাগুলো তুলে নাও, বরং এর বদলে তুমি আমাকে কিছু কষ্ট দিয়ে দাও। যদিও আমার ঘরে শ্বশানের পাথর চাপা বোবা কষ্টগুলো গুমড়ে মরে, দিন দিন অপেক্ষাগুলো বড় দীর্ঘ মনে হয়। মাঝে মাঝে রিক্সার বেল শুনে জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখি, না তুমি আসো না, আসবে না জানি। কিসের তবে অপেক্ষা!! বৃষ্টি আসলে দৌড়ে বাইরে যাই তোমার সাথে ভিজব বলে...দ্রূত ঘোর ভাঙ্গে, ঘরে ফিরে যেতে ইচ্ছা হয় না...একা একা ভিজি, তারমধ্যেও কী যেন একটা সুখ। কিন্তু আমারতো কষ্ট হবার কথা, তবে সুখটা কিসের!! জানি না, আমি জানি না। ফিরে আসো আর নাই আসো জেনো অপেক্ষায় আছি...সুতপা, অপেক্ষাগুলো খুব দীর্ঘ......খুব!! 

Sunday, April 13, 2008

জ়মে আছে জল, মুছে দে কেউ...


বরের কাগজ নিয়ে বসে আছি কখন থেকে, সকালের চা আসেনি এখনো। আমার স্ত্রী এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তাকে বেস কিছুদিন ধরে খুব অন্যমনস্ক দেখি। সে আমার সাথে খুব স্বাভাবিক আচরন করে, কিন্তু তার হাতটা ধরেই আমি বুঝতে পারি আমাদের ভেতর একটা গভীর দুরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। কেউ তাকে ভাবাচ্ছে ভীষন, কেউ তাকে নিয়ে যাচ্ছে অনেক দূরে। সে আমাকে তেমন কিছু বলেনি, তবে সে একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে। তার চোখের নিচে কালি দেখে আমি অবলিলায় বলে দিতে পারি সে আর এখানে নেই। মাঝে মাঝে তাকে জিগেস করতে ইচ্ছা হয় - কী তাকে ভাবায় এত। কেন যেন আমি তাকে প্রশ্নটা করতে পারিনি। দেয়ালে টাঙ্গানো ওর আর আমার ছবিটা দেখলে মনে হয় কোন রুপকথার বইয়ের মলাট। কিন্তু ছবিটা আমাকে ধিক্কার দিয়ে বলে ওটা একটা দস্তখতের সম্পর্ক, আমাদের ভেতর কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। এতদিন বেস কেটে যাচ্ছিল দিন, হঠাৎ কী জানি কী হল। নকলের উপর আবার বসতবাড়ি কিসের...ওকে আমি ধরে রাখিনি, তাও সে দৌড়ে জেতে পারে না।প্রতিদিন সকালে জানালার গ্রিল ধরে সে দাঁড়িয়ে কী ভাবে কে জানে, আমার তা দেখতে ভালো লাগে না, ভাবি তাকে গিয়ে বলি জানালার বাইরের পৃথিবীতে জেতে তোমার কোন বাধা নেই, পারি না। আমি তা পারি না। আমি একজন দুর্বল মানুষ। আমার মেয়েটার ভীষন জ্বর, কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। তার খেলনাগুলো কার্পেটের উপর ছড়ানো। এই রোববার তাকে একটা বার্বি কিনে দেয়ার কথা ছিল। তাই শুনে তার সে কি আনন্দ। নতুন সে পুতুলের প্যাকেটটা তার মাথার কাছে পড়ে আছে।সে চোখ খুলেও দেখছেনা। আমার কোমরের ব্যাথাটাও ভোগাচ্ছে ভীষন। টেলিভিশনের রিমোট হাতে নিয়ে বসে থাকি।একটার পর একটা চ্যানেল বদলাই। যা বদলাতে পারিনা, তাই ভাবাচ্ছে ভীষন। আমার বাসার বাইরে কয়েকটা ফেরিওালা প্রতিদিন একি জিনিষ নিয়ে আসে, ওদের জীবনও কী একঘেয়ে? আমার মত সবারই কী দিন শেষে ক্লান্ত লাগে ভীষন। কী জানি কেন এমন লাগে। জীবনের এত এত জটিলতা ভাল লাগেনা, আমার সব ছেড়ে-ছুড়ে অনেক দূরে চলে জেতে ইচ্ছা হয়। কত দূরে গেলে শান্তি পাওয়া যায়? মানুষের জনপদে কোন শান্তি নাই, একাকীত্তে শান্তি নাই... ভাবি এক টুকরো মেঘের সাথে সন্ধি করে যদি ভেসে যেতে পারতাম, অনেক দূরে এক অনিশ্চিত আরেকটা জীবনের খোজে্‌......... সবুজ ঘাসের গোপন ইচ্ছা আমাকে নিয়ে যা... দলছুট মানুষের এক স্বপ্ন জমা হারানো পৃথিবীতে।।

Monday, April 7, 2008

মানুষ রোদ মানুষ ছায়া ৩

- ফোনের ওইপাশের পৃথিবীটা কেমন? তোমার পাশের ফুলদানিটার ফুলগুলো বাসি না তাজা তার খবর 
পাই না। ফোনের ভেতর দেখতে পারি না তোমার চারপাশের  দেয়ালটা কি  রঙের। জানি না তোমার চোখের নিচের দাগগুলো কি খুশিতে ঝলমল নাকি অল্প অল্প মন খারাপের মায়া মায়া অভিমানে কাতর। ফোনে এতটা তারের পথ পেরিয়ে শুধু ভেসে আসে তোমার কন্ঠস্বর, পানির মত টলমল করে সে শান্ত শব্দ। সেই শব্দে আমি দেখতে পাই তোমার অগোছালো রুম,তোমার এলোমেলো চুল,কয়েকটি কাচের চুড়ি 
টেবিলের উপর ছড়ানো, 
আমি দেখতে পাই মানুষের দৃষ্টির বাইরের ফটো ছবি। চোখে খসরা করে একে ফেলি সে ছবি।

-যে ছোট্ট জায়গাটা তুমি দেখতে পাও না ওটাই আমার ব্যাক্তিগত জায়গা, ওখানেই আমি থাকি। অপু আমার পৃথিবীটা অনেক ছোট। আমার পৃথিবীতে কোন ছবি নাই। আমার পৃথিবীতে কেবল স্পর্শের দালানকোঠা, স্পর্শের হাত-মানুষ-গন্ধ। কন্ঠস্বর দিয়ে আমি চিনি নাম। তোমার ওখানে ওটা কোন পাখির শব্দ শোনা যাচ্ছে? ওটা কি কোকিলের শব্দ?

- হুমম......। আজকে চোলে আসো ইস্টার্ন প্লাসের দোতলায় ফূচকার দোকানে। আজ পরে এসো তোমার খুব পছন্দের বিচ্ছিরি সিলভারের দুলগুলো, চাইলে তুমি আজ ইচ্ছামত সাজতেও পার।

- আর সাথে সাদার উপর লাল কাজ করা সালোয়ার কামিজটা?

- মন্দ হয় না...

- আর লাল টিপ?

- তাও পরতে পার...

- আর গলায় সস্তা মাটির মালা পরতে পারি,

- আজ তুমি সব পার...

- কেন?

- পূর্বাভাসে বলেছে, আজ সারাদিন সারাদিন জঘন্য বৃষ্টি হবে, আজ রাস্তায় পানি জমবে হাটু ছাড়িয়ে কোমড় পর্যন্ত, আজ তুমি যা খুশি করতে পার, শুধু বৃষ্টি দেখে বলতে পারবে না- "বৃষ্টিত যেয়োনা, ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে।।"











Wednesday, April 2, 2008

সুতপা, আরো একটা চিঠি...

সুতপা কতদিন পর তোমার নামটা আবার চিঠির পৃষ্ঠায় লিখছি। প্রতিদিন মনে মনে কত কত চিরকুট লিখি তোমাকে। কে জানে সেইসব চিরকুট কোথায় জমা হয়। পোস্ট অফিস থেকে পোস্ট অফিসে যত কাগজের চিঠি জমা হয় প্রতিদিন, একজন সিরাজী তাকে চিঠি বলেনি কখনো। আমার চিঠি এক আবেগের ইতিহাস, বুকের ভেতর জমা এক ইতিহাসের বই থেকে ছেড়া একটি পৃষ্ঠা। ঠিকানা জানা নাই এমন কাউকে লিখে চলা চিরকুটই, আমার চিঠি। সুতপা, তুমি কী চিঠির কোন রুপকথা? অথবা বানানো একজন মানুষ! যদি তাই হয়, তাহলে বল, আমার কবিতার সব লাইনই কী শুধুই অদ্ভুত খেয়াল? তাহলে তোমাকে চিঠি লিখে চলি কেন? সুতপা, জানো, আমার প্রাই মনে হয় আমি কোথাও দেখেছি তোমাকে, হয়ত ঢাকার কোন রাস্তায় খুব সাধারন একটা চেহারায়। আমি জানি তোমার বারান্দায় তোমার নীল শাড়িটা শুকোতে দেয়া। রবিন্দ্রসঙ্গিত শুনে তুমি অন্ধকারের ভেতর ঢুকে আন্ধকার হাতড়ে খুজে ফেরো কাউকে। আর আমি বেচে থাকার মত বেচে আছি, আমার মত করে বেচে নেই। হিমেলের কয়েকটি বানানো হাসিকে মনে করে হেসে উঠি, এর চেয়ে তেমন বেশি ভালো নেই। স্বপ্নগুলো সিগারেটের ধোয়ার সাথে পাক খেয়ে মিলিয়ে যায়। অনেক রাতে বাসে করে ঘরে ফিরি। আমার খালি মনে হয় বারান্দায় তোমার নীল শাড়িটা বাতাসে নড়ছে, খুব সুন্দর নকসা করা একটা জামদানী শাড়ি। বাসের জানালা থেকে ওই বারান্দাটা অনেক দূরে......বাস চলে নিরব নিয়মিত প্রতিদিনের একি রাস্তা ধরে, দুই এক ফোটা চোখের জলের ফাকে তোমাকে লিখে ফেলি একটি খুব সাধারন চিঠি।।

Sunday, February 10, 2008

মানুষ রোদ...মানুষ ছায়া... ২

- ভীষন ভাবনার মধ্যে আছি বুঝলে, একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে যাচ্ছি, ভাবনাটাকে তাড়াতে পারছিনা। কী করা যায় বলতো নন্দিতা?

- অপু তুমি এত সিগারেট খাও কেন? সেগারেটের প্যাকেটটাকে ছুড়ে ফেলে দাও, দেখবে ভাবনা শান্ত হয়ে আসবে, ভাবনাটা ঠিক চলে যাবে না কিন্তু ভাবনাটাকে তোমার ভাল লাগবে। তোমার সিগারেট খাওয়ার বাহানাই হল ওই দূশ্চিন্তা। আমি জানি তুমি ভাবনাটাকে তাড়াতে চাও না, কি ঠিক বললাম?

- নন্দিতা তুমি আমাকে চমকে দিতে ভালবাস তাই না? তুমি যতই অস্বীকার করনা কেন আমি জানি ম্যাজিকের কৌশল তোমার জানা।

- ম্যাজিক! ম্যাজিক যদি জানতাম তাহলে সবার আগে মন্ত্র পড়ে তোমাকে দেখতে চাইতাম। এক মুহুর্তের জন্য তোমাকে দেখতে চাইতাম, জ়ানো আমার ভীষন জানতে ইচ্ছা করে মানুষ দেখতে কেমন, আমার ভীষন জানতে ইচ্ছা করে রঙ কি। বাতাসে আমার চুলটা নড়ছে, আমার জানতে ইচ্ছা করে তার ছায়াটা কেমন! তপু জানো আমার ভীষন ম্যাজিক শিখতে ইচ্ছা করে, ইচ্ছে করে ম্যাজিক করে সব কিছু বদলে দিতে, ইচ্ছে করে ইচ্ছেগুলোকে মুক্তি দিতে...ইচ্ছেগুলো জানো ছটফট করে, হাসফাস করে, ইচ্ছেগুলো মুমূর্ষ হয়ে পাথর হয়ে যাচ্ছে। অপু জানো, জানালা দিয়ে যখন রোদ আসে, আমি দাঁড়িয়ে থাকি জানালার গ্রীল ধরে, আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি...আমার চোখ দিয়ে সে আলো প্রবেশ করে না। এই চোখে তালা মারা, সেই তালার চাবি নেই কোন। পৃথিবী বড় নিষ্ঠুর, তাই না অপু?

- তোমার ম্যাজিকটা অন্যখানে। তুমি হাসলেই আমার মনখারাপের দিন শেষ, যদিও তুমি খুব কম হাসো। তোমাকে দেখলেই আমি অন্যরকম কেউ, তোমার জন্য প্রতিদিন আমি একটু করে অন্যরকম কেউ।

- অপু তুমি ভীষন খামখেয়ালী, তুমি ঘোর বুঝো কিন্তু অঘোর বুঝোনা। ঢাকা শহরের কোন ব্যস্ত রাস্তায় রিক্সায় যখন বসে থাকি তখন আমি ভীষন মনোযোগ দিয়ে শুন্তে থাকি চারিপাশের শব্দগুলো। মনে হয় যেন এক শব্দ তৈরীর উৎসব চলছে চারিপাশে। প্রতিটা শব্দের নিজস্ব একটা ছন্দ আছে। আমি সেই শব্দে ঘুরপাক খাই, যেন নদীর কুলে ভাসতে ভাসতে তীরে গিয়ে আছড়ে পড়ি, আবার ভেসে চলে যাই। অন্ধের অনুভূতি ভীষন গভীর, সেই অনুভবে সব হারিয়ে যায়। হাতড়ে হাতড়ে আমি রোদ্র-ছায়ার পার্থক্য করতে পারি না, লাল সবুজের পার্থক্য করতে পারিনা। আমার চোখে জল এলে তুমি যত্ন করে তা মুছে দাও, তোমার চোখে জল এলে আমার বুঝতে দেরি হয়ে যায়, আমি তোমার মুখ হাতড়ে হাতড়ে সে জল খুজে বের করার চেষ্টা করি...... আমার ভীষন নৌকাতে চড়তে ইচ্ছা করে নদীতে, আমাকে নিয়ে যাবে একদিন?

- নদীতে যেতে চাও নন্দীতা? আমি নদী থেকে ফিরে আসতে চাই, নদী আমাকে ছাড়ে না। যা বয়ে যায় তাই নদী, জীবন-ভাবনা সবই নদী। তিস্তা, কর্ণফুলী তার ছবি মাত্র। তোমাকে নিয়ে যাব খরস্রোতা নদীর ঘোলা পানির কাছে। কান পেতে শুনো সেই স্রোতের শব্দ। সেই শব্দটা একটানা, সেই নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে সিগারেটের প্যাকেটটা ছুড়ে ফেলে দিব।

মানুষ রোদ...মানুষ ছায়া...

- আজকের আকাশের নীলটা ব্যাকুল। ভাবছো রঙের আবার ব্যাকুলতা কিসের!! একদিন তোমাকেও শিখিয়ে দিব সে ভাষা। জানো, এই রকম ব্যাকুলতা আমি দেখেছি আমাদের গ্রামের এক রাখাল বালকের অস্থির চোখে। সেই চোখেই আছে মুক্তির সংগ্রামের বাক্স ভর্তি গুপ্তধন। সেই বাক্স খললেই খলখল হাসি, ফুল বাগানে আমাদের লুকচুরি খেলা, বাশের সাকোর উপর বিকেলের বাতাস, শ্রাবনের কোন সন্ধ্যায় মানুষের খামখেয়ালি মন খারাপের বাতিক...।

- তুমি সব কিছু এমন অদ্ভুত করে ভাব কেন?

- তুমি ভাবনাকেও ব্যাকরনে বাধতে চাও! কোন বিকেলে চা খেতে খেতে তোমাকে খুব ছোট্ট একটা কৌতুক বলে যদি হো হো করে হেসে উঠি, তাহলে তুমি কি তাকেও অদ্ভুত বলবে? আজ বিকেলে নীলক্ষেতে চলে আসো, চা-পুড়ী খেতে খেতে তোমাকে একটা গল্প শোনাব। তারপর তোমাকে নিয়ে যাব এলিফ্যান্ড রোডের সেই সব গলিতে যেখানে স্কুল ছুটির দিন শেষ হয় না কখনও।

- অপু, তুমি এত স্বপ্ন দেখতে ভালবাস কেন?

- হা হা হা, স্বপ্ন দেখি বলেইতো নীলটাকে ব্যাকুল মনে হয়, স্বপ্ন দেখি বলেইতো মুখস্ত বুতামগুলো টিপে তোমাকে ফোন করি বারবার। স্বপ্নের জন্যই অপু সবসময় তোমার পাশে, তোমার হাত ধরে সারা দুপুর বসে থাকে টি এস সি ‘র মোড়ে...

(এরপর প্রায় ১ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড ওরা চুপ থাকে, অতপর)

- অপু, কথা বলছো না কেন?

(আরো ২০ সেকেন্ড কোন ওরা নিশ্চপ থাকে, যদিও তখন এই ২০ সেকেন্ড অনেক দীর্ঘ ছিল)

- অপু অপু, কিছুতো বলো......

- রোদ্র ছরিয়ে পরেছে বাতাসের বারান্দায়, আমরা এখনও ব্যাকুল ঐ আকাশের মত। আকাশও কি ভালবাসতে জানে? আকাশ কিভাবে জানল মানুষের মনের গোপন সমীকরন, দাগ দাগ ব্যাথার জল তরঙ্গ যা লুকিয়ে থাকে গানের মধ্যে!! আকাশও কিভাবে ঠিক মানুষের মত করে মন খারাপ করে, ব্যাকুল হয়!!

Wednesday, January 16, 2008

বন্ধ জানালা ও কাঠপেন্সিল ১…

চোখ বন্ধ করি,হঠাৎ চোখ খুলি, কেউ নেই। আবার হাত দিয়ে চোখ ঢাকি, কিছুক্ষন পর আবার চোখ খুলি, না তাও কেউ নেই, স্টেডলারের কাঠপেন্সিল্টা ঠিক আগের জায়গাতেই আছে। কেউ নেই, কেউ আসেনি। রাত বাড়ছে, কোথাও কেউ নেই, ভীষন কথা বলতে ইচ্ছা করে, কেউ নেই। কাঠপেন্সিলটা হাতে নিয়ে বসে থাকি, কিছুই লিখতে পারিনা, কিছুই না। তুষার তোরও কি মাঝে মাঝে এমন হয়? মাথার ভেতর ভীষন বাতাসের শব্দ শুনি, মনে হয় ফুরিয়ে আসছে সব। ওই যে রমনা পার্কের লেকের ধারের বেঞ্চিটার বয়স বাড়ছে, তাকে সঙ দিয়ে তার পাশের গাছটার বয়সও বাড়ছে, তার পাশের রাস্তাটাও পুরানো হয়ে যাচ্ছে, পুরান চেহারাগুলো কমে যাচ্ছে নতুন চেহারাগুলো বাড়ছে, ফুরিয়ে যাছে সব। হাওয়াই দীপে যাওয়ার সখ ফুরিয়ে যাচ্ছে, ফুরিয়ে যাচ্ছে ক্যালেন্ডারের পাতা, বয়স, স্বপ্নের ছোট-খাট গল্প, ফুরিয়ে যাচ্ছে...ফুরিয়ে যাচ্ছে সব। সেদিন বাসে আমার সামনে বসে এক তরুন তার প্রেমিকাকে বলেছিল, তাদের ভালবাসা কোনদিন শেষ হবে না। আমারও আগে ওই রকম মনে হত। কিন্তু একদিন আবিষ্কার করলাম, সেই ভালবাসাই শেষ হবে একদিন যা শুরু হয়েছিল, যার শুরু আছে তার শেষ আছে। সবই ফুরিয়ে যাবে, জেতে হয়। জীবন আর জীবনের সব কিছুই তাসের বাড়ি। আমার খেলা ফুরায় আসে, আমি কাঠপেন্সিল নিয়ে বসে থাকি, কিছুই লিখতে পারিনা। ইদানিং টিভিতে মরা মানুষের চোখের দিকে তাকালে আমি কিছু শব্দ দেখি- “game over”, “so it ends”, “goodbye- all that I had”, “feeling free”, “death is a magic”, “that’s real/pure”….সেইদিন ইরাকের এক যুবকের মৃত দেহ দেখাচ্ছিল, তার চোখে আমি স্পষ্ট দেখলাম লেখা- “আমি এখন জানি আসলে ঈশ্বর কে, হায় মানুষ কেন এখনও ধর্মের জন্য যুদ্ধ করে, সবার ঈশ্বরতো একি”,... মৃত্যু পরম সত্য, মৃত্যুর মাধ্যমে শেষ হয় সব রহস্য, তার পরেই জানা যায় সব সত্য। জীবন আর মৃত্যুর মুধ্যে খুব পাতলা একটা পর্দা,তারা পাশাপাশি থাকে সবসময়। অস্থির লাগে আমার, পেন্সিলটা নিয়ে বসে থাকি, কি লিখব বুঝে পাই না। সব ফুরায় আসে।।

(Nothing last forever)

Saturday, January 12, 2008

কোথাও কেঊ নেই ২

স্পর্শ কি?
এটা কি মেঘের মত নিবির কোন ভাসমান আরেকটা পৃথিবী, সমুদ্র!
মনের ভেতর একটা পুরানো বাড়ির দোতলার কোনায় ছোট্ট একটা রুম!
স্পর্শ কি বাতাসের কোন নদী,নদীর তীরে একটা ঘুড়ি হাতে বোকা ছেলেটার বিস্ময়?
নাকি এইটা অন্য রকম একটা রঙ,
রঙ তুলি হাতে লম্বা চুলের খামখেয়ালি আর্টিস্টের এবস্ট্রাক্ট আর্ট!
এটা কি শুধুই একটা শব্দ! নাকি এটা ধারন করে শব্দহীনতার বর্ণমালা,
স্পর্শ কি রবীন্দ্রসঙ্গীতের শরীর, কম্পমান কন্ঠসর,
স্পর্শ কি নারীর শীতল চোখ, নাকি তার চেয়েও গভীর!
এটা কি খালি পায়ে বৃষ্টি ভেজা রাজপথে হারিয়ে যাওয়া,
নাকি শৈশবের খেলার সাথির বারিয়ে দেওয়া হাত,
এতে কি এমন আছে যার জন্য চোখে জল আসে,
স্পর্শ থেকে জন্ম নিতে থাকে আরো স্পর্শ,
স্পর্শেই মুক্তি, ডানা ঝাপ্টানো, আকাশ থেকে আকাশে উড়ে জেতে আর কোন বাধা নেই,
স্পর্শ উষ্ণ, অমূল্য, নিমিষেই হারিয়ে যায়……..
রাত বেড়ে চলে, চারিপাশে নিশ্চুপ আধার,
কোথাও কেউ নেই, কোন কিছুই স্পর্শ করে না তখন,
তুষারের কবিতার কয়েকটা লাইন শুধু মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়,
জীবনের কঙ্কালকে দেখি ল্যামপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে বিড়ি টানে,
একটা হাত আমার কপালের কাছাকাছি এসে থামে,
হাতটা আমাকে মধ্যরাতের বারান্দায় একা ফেলে চলে যায়,
তখন ভীষন জানতে ইচ্ছা করে স্পর্শের বাইরে ওরা সবাই কোথায় কেমন আছে!!

কোথাও কেঊ নেই........


এখন কত সকাল? ঘড়ির কাটা ডেকে রোদকে নিয়ে আসে সাহাবাগের রাস্তায়। পাখিদের চোখে হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙ্গে সকালের শান্ত রোদ। হয়ত তুমি এখনও বিছানায়, কাথা মুড়ি দিয়ে জানালার দিকে মুখ ফিরিয়ে ঘুম কাতর, জানালার ফাক দিয়ে হেলে পড়া কয়েকটি রোদের রেখা তোমার কপালে আলত করে ছড়ানো। আর এখানে আমি মধুর ক্যান্টিনে চায়ের কাপে দেই এক চুমুক, দুরের ওই বড় গাছটা দেখে তোমাকে মনে পড়ল। ওই যে দূরে তুমি, একটা শাদা শাড়ি পড়ে তুমি এইদিকে আসছ,আর অনভ্যস্ত শাড়ির আচলটা সামলাতে গিয়ে তুমি হিমশিম খাচ্ছ। ২১ বছরের যুবতি তুমি তখন, ওই শাড়িটা তোমার ছেলেমানুষিকে ঢাকতে পারেনি, কি যেন একটা নোট চাইলে তুমি…...আমার চায়ের কাপে আরেকটি চুমুক, আজ তোমার জন্মদিন,বলত তোমার জন্য কি এনেছি!!... কয়েকটি লাল আর নীল কাচের চুড়ি, সঙ্গে কয়েকটা তাজা কদম ফুল... তুমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছ কেন?? এইসব কিছুইনা, আমার দিকে এইবার তাকাও, এই চোখ থেকে গভীরতাগুলো নিয়ে নাও, এইসব গভীরতা চুড়ির মত ভেঙ্গে যায় না, ফুলের মত পচে যায় না, এইসব গভীরতা অকৃত্রিম...... ওই যে দেখ আকাশে এলোমেলো ছড়ানো ছয় সাতটি তারা, কোনদিন যদি দেখ আমি পাশে নেই, যদি খুব একা লাগে তখন, যদি মনের বিষন্ন জানালাগুলো খুলে যায়, যদি......কেপে কেপে চোখে জমে উঠে পানি, তাহলে ওই তারাগুলো দেখ, ওখানে আমাকে পাবেনা, দেখবে আমাদের ভালবাসাগুলো প্রজাপতি হয়ে পাড়ি দায় মহাকাশ......দুরে কোথাও একটি তারা কেপে কেপে ওঠে, ওইখানে জমা রেখো দীর্ঘশাসগুলো......আরও কত কিছু বলেছিলাম তোমাকে.........আজ বেশি কিছু মনেও করতে পারিনা,......চায়ের কাপে আমার আরেকটা চুমুক, প্রচন্ড বৃষ্টি তুমি আমার হাত ধরে দৌড়াচ্ছ, রাস্তায় কোন রিক্সা নেই, তোমার পায়ের নূপূর ঝনঝন করে বেজে উঠছে, বৃষ্টির শব্দের সাথে ওই নূপুরের শব্দ মিলে তৈরী করছে এক অদ্ভূত অরকেস্ট্রা......বৃষ্টিটা বাড়ছে......সুতপা, দৌড়াও......তুমি ভিজে যাচ্ছ......আমার হাতে আর তোমার হাত নেই......ভীষন জমকালো একটা লাল শাড়ি পড়ে তুমি দৌড়ে উঠে গেলে একটা সাদা গাড়িতে............আমি দৌড়াচ্ছি একা একা.........বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে আমার সারা শরীর......তবু আমি দৌড়াচ্ছি......চায়ের কাপে আরেকটা চুমুক......ওই জায়গাটায় আমি আটকে যাই......আমার কাবল মনে হয় আমি দৌড়াচ্ছি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে.........।।