Sunday, April 13, 2008

জ়মে আছে জল, মুছে দে কেউ...


বরের কাগজ নিয়ে বসে আছি কখন থেকে, সকালের চা আসেনি এখনো। আমার স্ত্রী এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তাকে বেস কিছুদিন ধরে খুব অন্যমনস্ক দেখি। সে আমার সাথে খুব স্বাভাবিক আচরন করে, কিন্তু তার হাতটা ধরেই আমি বুঝতে পারি আমাদের ভেতর একটা গভীর দুরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। কেউ তাকে ভাবাচ্ছে ভীষন, কেউ তাকে নিয়ে যাচ্ছে অনেক দূরে। সে আমাকে তেমন কিছু বলেনি, তবে সে একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে। তার চোখের নিচে কালি দেখে আমি অবলিলায় বলে দিতে পারি সে আর এখানে নেই। মাঝে মাঝে তাকে জিগেস করতে ইচ্ছা হয় - কী তাকে ভাবায় এত। কেন যেন আমি তাকে প্রশ্নটা করতে পারিনি। দেয়ালে টাঙ্গানো ওর আর আমার ছবিটা দেখলে মনে হয় কোন রুপকথার বইয়ের মলাট। কিন্তু ছবিটা আমাকে ধিক্কার দিয়ে বলে ওটা একটা দস্তখতের সম্পর্ক, আমাদের ভেতর কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। এতদিন বেস কেটে যাচ্ছিল দিন, হঠাৎ কী জানি কী হল। নকলের উপর আবার বসতবাড়ি কিসের...ওকে আমি ধরে রাখিনি, তাও সে দৌড়ে জেতে পারে না।প্রতিদিন সকালে জানালার গ্রিল ধরে সে দাঁড়িয়ে কী ভাবে কে জানে, আমার তা দেখতে ভালো লাগে না, ভাবি তাকে গিয়ে বলি জানালার বাইরের পৃথিবীতে জেতে তোমার কোন বাধা নেই, পারি না। আমি তা পারি না। আমি একজন দুর্বল মানুষ। আমার মেয়েটার ভীষন জ্বর, কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। তার খেলনাগুলো কার্পেটের উপর ছড়ানো। এই রোববার তাকে একটা বার্বি কিনে দেয়ার কথা ছিল। তাই শুনে তার সে কি আনন্দ। নতুন সে পুতুলের প্যাকেটটা তার মাথার কাছে পড়ে আছে।সে চোখ খুলেও দেখছেনা। আমার কোমরের ব্যাথাটাও ভোগাচ্ছে ভীষন। টেলিভিশনের রিমোট হাতে নিয়ে বসে থাকি।একটার পর একটা চ্যানেল বদলাই। যা বদলাতে পারিনা, তাই ভাবাচ্ছে ভীষন। আমার বাসার বাইরে কয়েকটা ফেরিওালা প্রতিদিন একি জিনিষ নিয়ে আসে, ওদের জীবনও কী একঘেয়ে? আমার মত সবারই কী দিন শেষে ক্লান্ত লাগে ভীষন। কী জানি কেন এমন লাগে। জীবনের এত এত জটিলতা ভাল লাগেনা, আমার সব ছেড়ে-ছুড়ে অনেক দূরে চলে জেতে ইচ্ছা হয়। কত দূরে গেলে শান্তি পাওয়া যায়? মানুষের জনপদে কোন শান্তি নাই, একাকীত্তে শান্তি নাই... ভাবি এক টুকরো মেঘের সাথে সন্ধি করে যদি ভেসে যেতে পারতাম, অনেক দূরে এক অনিশ্চিত আরেকটা জীবনের খোজে্‌......... সবুজ ঘাসের গোপন ইচ্ছা আমাকে নিয়ে যা... দলছুট মানুষের এক স্বপ্ন জমা হারানো পৃথিবীতে।।

Monday, April 7, 2008

মানুষ রোদ মানুষ ছায়া ৩

- ফোনের ওইপাশের পৃথিবীটা কেমন? তোমার পাশের ফুলদানিটার ফুলগুলো বাসি না তাজা তার খবর 
পাই না। ফোনের ভেতর দেখতে পারি না তোমার চারপাশের  দেয়ালটা কি  রঙের। জানি না তোমার চোখের নিচের দাগগুলো কি খুশিতে ঝলমল নাকি অল্প অল্প মন খারাপের মায়া মায়া অভিমানে কাতর। ফোনে এতটা তারের পথ পেরিয়ে শুধু ভেসে আসে তোমার কন্ঠস্বর, পানির মত টলমল করে সে শান্ত শব্দ। সেই শব্দে আমি দেখতে পাই তোমার অগোছালো রুম,তোমার এলোমেলো চুল,কয়েকটি কাচের চুড়ি 
টেবিলের উপর ছড়ানো, 
আমি দেখতে পাই মানুষের দৃষ্টির বাইরের ফটো ছবি। চোখে খসরা করে একে ফেলি সে ছবি।

-যে ছোট্ট জায়গাটা তুমি দেখতে পাও না ওটাই আমার ব্যাক্তিগত জায়গা, ওখানেই আমি থাকি। অপু আমার পৃথিবীটা অনেক ছোট। আমার পৃথিবীতে কোন ছবি নাই। আমার পৃথিবীতে কেবল স্পর্শের দালানকোঠা, স্পর্শের হাত-মানুষ-গন্ধ। কন্ঠস্বর দিয়ে আমি চিনি নাম। তোমার ওখানে ওটা কোন পাখির শব্দ শোনা যাচ্ছে? ওটা কি কোকিলের শব্দ?

- হুমম......। আজকে চোলে আসো ইস্টার্ন প্লাসের দোতলায় ফূচকার দোকানে। আজ পরে এসো তোমার খুব পছন্দের বিচ্ছিরি সিলভারের দুলগুলো, চাইলে তুমি আজ ইচ্ছামত সাজতেও পার।

- আর সাথে সাদার উপর লাল কাজ করা সালোয়ার কামিজটা?

- মন্দ হয় না...

- আর লাল টিপ?

- তাও পরতে পার...

- আর গলায় সস্তা মাটির মালা পরতে পারি,

- আজ তুমি সব পার...

- কেন?

- পূর্বাভাসে বলেছে, আজ সারাদিন সারাদিন জঘন্য বৃষ্টি হবে, আজ রাস্তায় পানি জমবে হাটু ছাড়িয়ে কোমড় পর্যন্ত, আজ তুমি যা খুশি করতে পার, শুধু বৃষ্টি দেখে বলতে পারবে না- "বৃষ্টিত যেয়োনা, ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে।।"











Wednesday, April 2, 2008

সুতপা, আরো একটা চিঠি...

সুতপা কতদিন পর তোমার নামটা আবার চিঠির পৃষ্ঠায় লিখছি। প্রতিদিন মনে মনে কত কত চিরকুট লিখি তোমাকে। কে জানে সেইসব চিরকুট কোথায় জমা হয়। পোস্ট অফিস থেকে পোস্ট অফিসে যত কাগজের চিঠি জমা হয় প্রতিদিন, একজন সিরাজী তাকে চিঠি বলেনি কখনো। আমার চিঠি এক আবেগের ইতিহাস, বুকের ভেতর জমা এক ইতিহাসের বই থেকে ছেড়া একটি পৃষ্ঠা। ঠিকানা জানা নাই এমন কাউকে লিখে চলা চিরকুটই, আমার চিঠি। সুতপা, তুমি কী চিঠির কোন রুপকথা? অথবা বানানো একজন মানুষ! যদি তাই হয়, তাহলে বল, আমার কবিতার সব লাইনই কী শুধুই অদ্ভুত খেয়াল? তাহলে তোমাকে চিঠি লিখে চলি কেন? সুতপা, জানো, আমার প্রাই মনে হয় আমি কোথাও দেখেছি তোমাকে, হয়ত ঢাকার কোন রাস্তায় খুব সাধারন একটা চেহারায়। আমি জানি তোমার বারান্দায় তোমার নীল শাড়িটা শুকোতে দেয়া। রবিন্দ্রসঙ্গিত শুনে তুমি অন্ধকারের ভেতর ঢুকে আন্ধকার হাতড়ে খুজে ফেরো কাউকে। আর আমি বেচে থাকার মত বেচে আছি, আমার মত করে বেচে নেই। হিমেলের কয়েকটি বানানো হাসিকে মনে করে হেসে উঠি, এর চেয়ে তেমন বেশি ভালো নেই। স্বপ্নগুলো সিগারেটের ধোয়ার সাথে পাক খেয়ে মিলিয়ে যায়। অনেক রাতে বাসে করে ঘরে ফিরি। আমার খালি মনে হয় বারান্দায় তোমার নীল শাড়িটা বাতাসে নড়ছে, খুব সুন্দর নকসা করা একটা জামদানী শাড়ি। বাসের জানালা থেকে ওই বারান্দাটা অনেক দূরে......বাস চলে নিরব নিয়মিত প্রতিদিনের একি রাস্তা ধরে, দুই এক ফোটা চোখের জলের ফাকে তোমাকে লিখে ফেলি একটি খুব সাধারন চিঠি।।